বাংলাদেশে কচুরিপানার সমস্যা ও সমাধানের সুপারিশমালা

 





বাংলাদেশে কচুরিপানার সমস্যা ও সমাধানের সুপারিশমালা ।

কচুরীপানার পরিচয় :

কচুরিপানা একটি জলজ উদ্ভিদ যাহা ইংরেজিতে water hyacinth নামে পরিচিত ।এটা জলজ উদ্ভিদের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় উদ্ভিদ ।এর ফুলগুলি বেগুনি রঙের হয়ে থাকে ।দেখতে অনেকটা অনেকটা মনোমুগ্ধকর ।

এক সময় উপকারী হিসেবে কচুরিপানাকে বিবেচনা করা হতো বিশেষ করে গবাদি পশুর খাদ্য এবং কৃষি কাজে কচুরিপানার ব্যবহার দীর্ঘদিন যাবত চলে আসে । তাই সবাই উপকারী হিসেবে বিবেচনা করত কিন্তু বর্তমানে কচুরিপানা একটি মারাত্মক সমস্যা ।

কচুরিপানার বংশ বিস্তার :

কচুরিপানা যৌন ও অযৌন দুই পদ্ধতিতেই বংশবিস্তার করতে পারে এর প্রজনন ক্ষমতা দ্রুত হয় ।অতি দ্রুত প্রতিকূল পরিবেশেও এদের বংশবিস্তার ঘটে থাকে ।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কচুরিপানা ছড়িয়ে আছে ।বাংলাদেশেও কচুরিপানা একটা বিশাল স্থান দখল করে আছে।

কচুরিপানা কেন এত ভয়ংকর ?

বাংলাদেশে জলজ আগাছার মধ্যে কচুরিপানা অন্যতম ।এর বংশবিস্তার অতি দ্রুত হয়।প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে ।পানির মাধ্যমে দ্রুত বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে ।

কচুরিপানার প্রাকৃতিক শত্রু তেমন নাই। পানিতে পরিবেশ নষ্ট করে এবং অক্সিজেন কমায় দেয় ।মাছের জন্য বিশাল এক ক্ষতি করে থাকে ।কৃষিতে ফসলের জন্য একটা মারাত্মক আগাছা ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।ফসলের খাদ্যের মধ্যে ভাগ বসায়।

আবদ্ধ স্থানে কচুরিপানা বংশবিস্তারের কারণে অনেক মশার জন্ম হয় এবং তার মাধ্যমে বহু রোগ ব্যাধির সৃষ্টি করিয়া থাকে।


কচুরিপানা পরিষ্কার করা, বেশ কঠিন ব্যাপার ।এর জন্য অনেক শ্রম ঘন্টা ব্যয় করতে হয় ।কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে ।কচুরিপানার কারণে অনেক সময় জলযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।

কচুরিপানা থাকার কারণে পানির গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায় এবং দূষিত পদার্থ তৈরি করে থাকে।

কচুরিপানা থাকার কারণে পানিতে সূর্যের আলো ঠিকভাবে পৌঁছে দিতে পারেনা ফলে মাছের অক্সিজেনের ঘাটতি সমস্যা হয়। মাছ তেমন বাড়ে না।

কচুরিপানা বাংলাদেশে কিভাবে সমস্যার সৃষ্টি করছে :


বাংলাদেশ একটি নদী বহুল দেশ অনেক জলাশয় পুকুর বেল খাল রয়েছে এছাড়াও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা রয়েছে। বর্ষাকালে বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত থাকে যার কারণে কচুরিপানার বংশবিস্তার সুবিধার জনক অবস্থায় থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আয়তন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার।১৪৭ ৫৭০০০ হেক্টর এর মধ্যে জলাভূমি রয়েছে ৪৭ লাখ হেক্টর এবং কৃষিতে রয়েছে ৮৮ লাখ হে :বনভূমি ২৫লাখ হে:।এই জলাশয়ের মধ্যে কচুরিপানা বিশাল একটা স্থান দখল করে আছে।বর্তমানে অধিকাংশ জলাবদ্ধ জায়গায কচুরিপানা একটা মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি করছে ।বাংলাদেশের জলাশয় গুলোর মধ্যে পুক রয়েছে ,লেক রয়েছে চিংড়ি খামার রয়েছে, পেন খামার ,খাঁচায় মাছ চাষ ,মৌসুমী জলাশয় রয়েছে, সুন্দরবন ,বিল কাপ্তাইলেক এবং হাওর,নদী, মোহনা।

এই সব মিলেই আমাদের জলাশয় । এছাড়া সমুদ্রের সীমার প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে ।যেখানেও কিছু কিছু কচুরিপানা দেখা যায়।

কচুরিপানার উপকারিতা:

বর্তমানে কচুরিপানা যেসব কাজে লাগতেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এরপরে জৈব সার হিসেবে কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়।

কয়েল তৈরিতে কচুরি বানায় ব্যবহার করা হচ্ছে ।

আলু চাষে কচুরিপানা মালসিং ফসল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় ভাসমান ভাসমান বেডে ফসল আবাদ হচ্ছে ।

এছাড়া কচুরিপানা পানিতে বিষাক্ততা কমায় ।কীটনাশকের বিষাকতা কমিয়ে রাখে।অনেক জলদ জীবের বাসস্থান হিসেবে কচুরিপানা ব্যবহার হয় ।পাট পচানোর জন্য কচুরিপানা বাংলাদেশের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য জিনিস।

পচুরিপানার ফুল সুন্দর অনেক আকর্ষণীয় ।

কচুরি সাকার অনেক দেশেই খেয়ে থাকে।

অনেক মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়।

পানিতে চলাচলের জন্য কচুরিপানার ভেলা তৈরি করা হয়।

কচুরি বানার সম্ভাব্য ক্ষতি কমায় আনার জন্য নিম্ন বর্ণিত পন্থাগুলো অবলম্বন করা যাইতে পারে :

১. আবদ্ধ জলাশয়ে কচুরিপানাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে পুরা জায়গাটাকে গ্রাস করতে না পারে ।

২. কচুরিপানাকে মুক্তভাবে বাড়তে না দেওয়া।

৩. প্রতিবছর কচুরি পানাকে জৈবসারে ব্যবহার করার জন্য মাটিতে গাদা করে রাখা এবং পচানোর পর জমির মধ্যে ব্যবহার করা ।

৪. আলু সহ বিভিন্ন ফসলে এবং ফল বাগানে মালসিং পদার্থ হিসেবে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা ।

৫. বাণিজ্যিকভাবে কচুরিপানা থেকে জৈব সার প্রস্তুতির ব্যবস্থা নেওয়া ।

৬ মশার কয়েল তৈরির জন্য কচুরি পানাকে ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া ।

বাংলাদেশে কচুরিপানা সহ যে সকল জলজ আআগাছা রয়েছে তার গবেষণা জোরদার করা যাতে করে এদেরকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায় ।

৭.কোন শিল্পপণ্য উৎপাদন করা যায় কিনা যাচাই করে দেখান

৮. ভাসমান বেডে কচুরিপানার ব্যবহার আরও বাড়ানো দরকার।

৯. মাছ চাষের এলাকা সম্প্রসারণ করা

১০.মৌসুমী জলাশয়ে যে সকল কচুরিপানা জমা হয় শুষ্ক মৌসুমে অপসারণ করে নিরাপদে রাখা।


Post a Comment

0 Comments