বীজ পরীক্ষাকরণ (SeedTesting)
অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা, সতেজতা, কীটপতঙ্গের উপস্থিতি এবং ক্ষত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে নিতে বীজ পরীক্ষা প্রয়োজন। মানসম্পন্ন বীজ পেতে হলে বীজ পরীক্ষা দরকার।প্রথমে বপন করা হবে এমন বীজের গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য, যেমন- বিশুদ্ধতা, সজীবতা ,অঙ্কুরোদগম,সতেজতা পরীক্ষার মাধ্যমে মুল্যায়ন করে নিতে হবে ।
বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষা কি?
উপযুক্ত পরিবেশে বীজের ভ্রুণ হতে অংকুর বের হয়ে সুস্থ-সবল চারা গজানোকে বীজের অংকুরোদগম বলে ।
আন্তর্জাতিক বীজ পরীক্ষণ সমিতির দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী
পরিবেশবান্ধব পরিবেশে কোন ফসলের বীজ থেকে প্রাথমিকভাবে যে অঙ্গ বের হয় সেই অঙ্গ থেকে যদি উদ্ভিদের দরকারি অঙ্গসমূহ বৃদ্ধি পায় ও বের হয় যাহা পরবর্তীকালে স্বাভাবিকভাবে একটা গাছে পরিণত হয় তাহলে এই অবস্থাকে অঙ্কুরোদগম বলা হয়।
বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষার গুরুত্ব:
ব্যবহারের পূর্বে বীজ গজানোর পরীক্ষা
করা হলে বীজ ভালো আছে কিনা জানা যায়। বীজ হিসেবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে তা সহজেই জানা
যায়। বীজ পরীক্ষা করে আগেভাগেই ফলাফল জান গেলে খারাপ বীজের লোকসান থেকেও বাঁচা
যায় । বীজের মুখ ফাটলেই বা অংকুর বের হলেই যে বীজ ভালো হাত এ ধারণাটি সঠিক নয় ।
কারণ অংকুর বের হওয়ার পরও খারাপ বীজের কারণে অনেক চারা মারা যেতে দেখা যায়। সে
কারণে বীজ থেকে চারা গজানোর পর সম্পূর্ণ চারাটি পরীক্ষা করে দেখা দরকার।
বীজের অংকুরোদগম পরীক্ষার উদ্দেশ্য কি?
মূলত বীজ গজানোর শতকরা পরিমাণ জানার জন্য অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। গজানোর ক্ষমতা ভালো হলে মাঠ ফসলের অবস্থা ভালো হবে ।আবার গজানোর ক্ষমতা সন্তোষজনক না হইলে ফসল ভালো হবে না । বিশুদ্ধ বীজ বপন করেও ভালো ফলাফল না পাওয়া যেতে পারে। তাই কোন ফসলের মাঠের কাজ করতে গেলে বীজ বপনের আগেই অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা জানা থাকা দরকার ।এজন্য নমুনা সংগ্রহ করে অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয় ।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষার জন্য মোট কতটি বীজ পরীক্ষা করা হয়?
বীজের নমুনা থেকে বিশুদ্ধ বীজ নেয়া হয়।বড় আকারের হলে ৫০ টা আর ছোট আকারের বীজ হইলে ১০০ টা বীজ পরীক্ষার জন্য বসানো হয়।
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষার প্রচলিত পদ্ধতি কয়টি?
বীজের অঙ্কুরোদগম পরীক্ষার জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি প্রচলিত আছে যাহা নিম্নরূপ:
১ । র্যাগডল পদ্ধতি: পাটের ছালাতে পেঁচাইয়া এই পরীক্ষা করা হয়। একে প্যাঁচানো পদ্ধতি বলা হয়।
২। মাটির পাত্র পদ্ধতি:
মাটির কাঁসা বা বাসনে এই পরীক্ষা করা হয়।
৩। ব্লটিং পেপার পদ্ধতি:
ব্লটিং পেপারে এই পরীক্ষা করা হয়।
৪। কলার খোল পদ্ধতি:
কলা গাছের হলে বা ডাটায় এই পরীক্ষা করা হয়।
৫। মান কচুর ডগা পদ্ধতি:
মান কচুর ডাটার ডগা নিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়।
৬। পেট্রিডিস পদ্ধতি:
পরীক্ষার লেবে সাধারণত এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়।
০১. পেট্রিডিসে পরীক্ষা
পাত্রের তলদেশে চোষ কাগজ বসাতে হবে। পরিমানমত বিশুদ্ধ পানি দিয়ে চোষ কাগজ ভিজিয়ে নিতে হবে । এবার চোষ কাগজের উপর নির্দিষ্ট সংখ্যক বীজ ফাঁক ফাঁক করে বসিয়ে দিতে হবে ।ঢাকনা বন্ধ করে পাত্রটিকে আলো বাতাস ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। একটি ছোট কাগজে বীজের নাম, বীজের সংখ্যা, পরীক্ষা বসানোর তারিখ লিখে
পেট্রিডিসে আঠা দিয়ে লাগাতে হবে।
এই পরীক্ষায় বীজ বসানোর তিনদিন পর থেকেই অংকুর গণনার কাজ শুরু হয় এবং সাত দিনের মধ্যে গণনার কাজ শেষ হয় ।এর মধ্যে পানি শুকিয়ে গেলে হালকা পানি দিয়ে দিতে হবে।
প্রতিদিন অংকুরিত বীজ গণনার পর সেগুলো ফেলে দেয়া হয়। একটি চিমটার সাহায্য নিলে গণনার কাজে সুবিধা হয় । প্রতিদিন যে কয়টি অংকুরিত বীজ পাওয়া যাবে তা একটি ছকে লিখে রাখতে হবে । প্রত্যেক নমুনা থেকে দু'দফায় বীজ পরীক্ষা করা হলে ফলাফল ভাল হয়।
০২. মাটির পাত্র পদ্ধতি
মাটির থালায় ভেজা বালি দিয়ে ভরা হয়।
১০০ টি বীজ বসিয়ে হালকা করে বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বীজ বসানোর পর পাত্রটি ছায়াতে রাখতে হবে। বালি যেন শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বালিতে গজানোর কারণে চারা উঠালে শিকড় ছিঁড়ে যাবে না-ফলে সম্পূর্ণ চারা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। বপনের ৭ থেকে ১০ দিন পর গজানো চারা বালি থেকে তুলে একটা একটা করে পরীক্ষা করা হয়। বাছাই কালে যে সকল চারা বাদ দেওয়া হয় তা নিম্নরূপ:
বেশি ছোট চারা
বেশি বড় চারা
রোগাক্রান্ত চারা
দুর্বল শিকড়ের চারা
মৃত বীজ
পচা বীজ
গজায় নাই এরূপ বীজ।
এই সকল বাদ দেওয়ার পর কমপক্ষে ৮০ টি সুস্থ সবল চারা পাওয়া গেলে বীজ ভালো বলে ধরে নেওয়া হয় ।
০৩. ব্লটিং পেপার পদ্ধতি
ব্লটিং পেপার এক ধরনের মোটা চোষ কাগজ। যার উপর ৫০-১০০ টি বীজ বসাতে হবে। হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিতে হবে।অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। পেপার শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকা পানি দিতে হবে।
০৪. কলার খোল পদ্ধতি
চাকু দিয়ে কলার খোল লম্বালম্বি কেটে তার মধ্যে ৫০-১০০ টি বীজ
স্থাপন করে ভালোভাবে সুতলী দিয়ে বেঁধে ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, পানি যেন
শুকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকা পানি দিতে হবে।
০৫. র্যাগডল বা পাটের চট পেচানো পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় এক ধরনের মোটা চট। যার উপর ৫০-১০০ টি
বীজ রেখে বাঁশের কাঠি দিয়ে পেচিয়ে এবং হালকা পানি দিয়ে ভিজিয়ে ঠাণ্ডা ও
ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। চটের পরিবর্তে পুরানো
কাপড়/ডাস্টার ব্যবহার করেও এ পরীক্ষা করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, পানি যেন
শুকিয়ে না যায় । পানি শুকিয়ে গেলে মাঝে মাঝে হালকা পানি দিতে হবে।
০৬. মান কচুর ডগা
চাকু দিয়ে মান কচুর ডগা লম্বালম্বি কেটে তার মধ্যে ৫০-১০০ টি বীজ
স্থাপন করে ভালোভাবে সুতলী দিয়ে বেধে ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে
অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা করা হয়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, পানি যেন
শুকিয়ে না যায়। পানি শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকা পানি দিতে হবে।
বীজ পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত একটি ছকের নমূনা
বীজ অংকুরোদগমে বসানোর তারিখ-
বীজের সংখ্যা---
যে অংকুরিত বীজে ভবিষ্যৎ মূল ও কাণ্ড স্পষ্টভাবে চারা গজাতে দেখা
যায় সে বীজকেই বীজ হিসেবে
অন্যথায় তাকে অস্বাভাবিক চারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বীজের অংকুরোদগমকে শতকরা হারে (%) প্রকাশ করা হয় -
% অংকুরোদগম =
অংকুরিত মোট বীজের সংখ্যা x ১০০/মোট বীজের সংখ্যা
0 Comments