কিভাবে কফি চাষ করবেন?

 কিভাবে কফি চাষ করবেন?

                

 কেন কফি চাষ করা প্রয়োজন?

বর্তমান বিশ্বে কপি একটি অর্থকরী ফসল 

এবং জনপ্রিয় একটি পানীয় । সারা বিশ্বের মানুষ প্রতিদিন প্রায় ১১০ কোটি কাপ কফি পান করে থাকে।এর মূল্য প্রায় ৫৫০০ কোটি টাকা । চা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ফসল । বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চায়ের ভূমিকা বেশি হলেও কফি চাষে বাংলাদেশ  এগিয়ে আসতে পারে নাই। বাংলাদেশে কফি চাষের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে । কিছু কিছু এলাকায় স্বল্প পরিসরে কফি আবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে পাহাড়িয়া অঞ্চলে কফি চাষের সম্ভবনা রয়েছে।

 

বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় কফি চাষ হয়? 

বাংলাদেশে বর্তমানে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, টাঙ্গাইল ,রংপুর ও নীলফামারী জেলায় কফি আবাদ হচ্ছে।


বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কফি আবাদের সম্ভাবনা কতটুকু?
কৃষিতে উন্নয়ন করতে হলে বাণিজ্যিক কৃষির কোন বিকল্প নাই ।বাংলাদেশে যেহেতু জনবহুল দেশ। খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে বাণিজ্যিক কৃষির দিকে এগোতে হবে। বাংলাদেশে অনেক জমি এখনো অনাবাদি পড়ে আছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা যেসব এলাকায় কফি চাষ করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। অনেক লোকের আয়ের উৎস হবে ।পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। স্থানীয়ভাবে কফির খুব চাহিদা রয়েছে বিধায় বাংলাদেশে কফি চাষের একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

 

কফি চাষে কি ধরণের আবহাওয়া দরকার?

 কফি হালকা ছায়ায় ভাল হয় । সমুদ্রপৃষ্ঠ হইতে ৫০০ থেকে ১০০০ মিটার উচ্চতায় কপি ভালো হয়। বার্ষিক ১০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে কফি ভালো হয়। 

বাংলাদেশের চাষ উপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ু :

 কফি চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুব উপযোগী। এটি সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০-১০০০ মিটার উচ্চতায় এবং ১০০০-২০০০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ভাল হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের এবং টাঙ্গাইলের মধুপুরের গড়ের আবহাওয়া ও রংপুর অঞ্চলের কিছু এলাকা কফি চাষের জন্য যথেষ্ট  উপযোগী

মাটি :

কফি চাষের জন্য মাটি গভীর ,

মাটির ঝুরঝুরে হতে হবে ,

মাটির জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হতে হবে ,

মাটি হিউমাস সমৃদ্ধ হতে হবে ,

মাটির অম্লীয়মান সাড়ে ৪ থেকে ৬ এর মধ্যে ভালো হবে।


 

কফির জাত :


পৃথিবীতে কফি প্রজাতি সংখ্যা ১২৯ এর অধিক ।এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে মাত্র দুইটি কপি চাষ হয়ে আসছে এটি হলো কফি এরাবিকা আরেকটি হলো কপি কেনি ফোরা  কেনিফোরাকে রোবাষটা বলা হয় । সম্প্রতি  বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারি কফি১  উদ্ভাবন করেছেন । 

 

 চারা রোপণ :

কফির বংশ বিস্তার সাধারণত বীজ, কলম চারার মাধ্যমে হয়ে থাকে। কফি কাছ থেকে পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করা হয় ।এরপর ফলের খোসা ছাড়িয়ে বীজ বের করা হয়। পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর ভালোভাবে রোদে শুকানো হয়। বীজ শুকানো হলে শুকনা কাঠের গুঁড়া বা ছাইয়ের সাথে ছায়াতে  রাখা হয়। কয়েক দিন পর বীজ আলাদা করা হয় ।এরপর বীজতলায় বীজ বপন করা হয় । ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে চারা  গজায়। তারপর মা মার্চ মাসে পলিথিনের ব্যাগে ভরা হয় এবং মে-জুন মাসে গর্ত তৈরি করে জমিতে চারা রোপন করা হয়। রোপন সময়ে গর্তে কিছু জৈব ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়। দূরত্ব ৩ মিটার *৩ মিটার । এভাবে  রোপণ করলে একরপ্রতি  ৪৫০ টি চারার প্রয়োজন হয়।

 

ছায়া প্রদানকারী গাছ রোপন:

কপি গাছকে উচ্চ তাপমাত্রা থেকে এবং সূর্যের তীব্র আলো থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু ছায়া দানকারী বৃক্ষ রোপন করা হয়। এই জাতীয় বৃক্ষের মধ্যে সাধারণত কাঁঠাল কড়াই ডূমুর পেঁপে সুপারি  ইত্যাদি রোপণ হইতে পারে ।অনেক জায়গায়   সুপারি গাছও ব্যবহার করা যেতে পারে। সুপারি গাছ ব্যবহার হলে সেখানে গোলমরিচ ও চূই ঝাল গাছ লাগানো যাবে ।


সার প্রয়োগ :

সার ব্যবহারের পরিমাণ সাধারণত কফির জাত ,চারার বয়স ,মাটির গুনাগুন এবং আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে কম বেশি হতে পারে।  এরাবিকা যাতে সার কম ব্যবহার করতে হয়। বছরে চারবারে গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে। প্রথমবার  দিতে হবে গাছের ফুল আসার সময় ,দ্বিতীয়বার গাছের ফুল ফোটার পর , তৃতীয় বার আগস্ট মাসে  এবং চতুর্থ বার অক্টোবর মাসে একবার এই মোট চার বার সার দিতে হবে । প্রতি বারে গাছ প্রতি ইউরিয়া ২০ গ্রাম, টিএসপি ১৫ গ্রাম, পটাশ ২০ গ্রাম ।গাছের বয়স চার বছর হলে ইউরিয়া ৩৫ গ্রাম, টিএসপি ২৫ গ্রাম ,পটাশ ২৫ গ্রাম, গাছের বয়স পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি হলে ইউরিয়া ৪৫ গ্রাম টিএসপি ৩০ গ্রাম এবং পটাশ ৩০ গ্রাম দিতে হবে । রাসায়নিক সার বাদেও গাছপতি পাঁচ কেজি  জৈব সার দেওয়া দরকার ।গাছের গোড়া থেকে কিছুটা দুর দিয়ে সার দেওয়ার পর গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। সারের অভাবজনিত লক্ষণ দেখা গেলে ফুল বা ফল ধরার সময় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া ২০ গ্রাম  টিএসপি ও ১৮ গ্রাম পটাশ মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করা লাগবে ।


 পরিচর্যা:

ফুল হওয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণত আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে ।

দুসারির মাঝখানে সীম আবাদ করা যেতে পারে । মালচিং করতে  হবে। চারা মারা গেলে নতুন চারা লাগাইতে হবে।



ডালপালা ছাঁটাই:

গাছের ফল ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মাটি থেকে এক থেকে দেড় মিটার উচ্চতায় কেটে দিতে হবে এতে করে শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং ফল ধারণ ক্ষমতাও বেড়ে যাবে

 

 বালাই দমন:

কফিতে মিলিবাগ, গ্রীন বাগ, কান্ড ছিদ্রকারী প্রকার আক্রমণ হতে পারে ।এই সকল পোকা দমনের জন্য কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করতে হবে। রোগের মধ্যে পাতার রাষ্ট্র বেশি দেখা যায় এ রোগ দমনের জন্য ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে।

 

ফল সংগ্রহ:

 গাছের বয়স ৩ বছৰ পর থেকে কফি সংগ্রহ করা যায়। এরাৰিকা জাতে ফুল ফোটার ৯ মাস এবং রোবাস্ট জাতে ১১ মাস পর পরিপক  হয় ।  হাত দিয়ে তোলা হয়। সাধারণত ১৪-১৫ দিন পরপর ৫-৬ কিস্তিতে বছরে ২ বার ফল তোলা যায়। একটি গাছ থেকে বছরে ১ কেজি ফল  পাওয়া যায় । হেক্টর প্রতিফলন ৭৫০ থেকে ১০০০ কেজি।

 

Post a Comment

0 Comments