বাংলাদেশে জমি না বাড়িয়ে কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায়?
বাংলাদেশে জমি সীমিত । উৎপাদন বৃদ্ধি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে আবাদি জমি কমছ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কিছু কৌশল আলোচনা করা হলো:
১. উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড চাষের আবাদ বৃদ্ধি।
বাংলাদেশে বর্তমানে আবাদকৃত স্থানীয় জাতগুলো অপসারণ করে উচ্চ ফলনশীল ধান গম ভুট্টা আলু সরিষা ডাল জাতীয় তেল জাতীয় এবং সবজি ফসলে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ও হাইব্রিড জাত কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণ করতে হবে।
২. বালাই সহনশীল জাতের সম্প্রসারণ
বালাই প্রতিরোধে জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করতে হবে এবং কৃষকদের মাঝে প্রযুক্তি দ্রুত সম্প্রসারণ করত হবে।
৩. ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির সম্প্রসারণ
এর জন্য বন্যা অতিবৃষ্টি উচ্চ তাপমাত্রা করা লবণাক্ততা সহনশীল জাতের উদ্ভাবন করতে হবে এবং লোকেশন ভিত্তিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করতে হবে ।
৪. উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার
এই উদ্দেশ্যে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সুষমো সার ব্যবহার বাড়াতে হবে , জৈব সার ব্যবহার বাড়াতে হবে।
কম পানি ব্যবহার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে সেচ সাশ্রয়ী ফসল চাষাবাদে গুরুত্ব দিতে হবে প্রয়োজনে ফিতা পাইপ, ফোয়ারা ইরিগেশন ফর্টিফিকেশন পদ্ধতি,মালঢিঙ উন্নত সেচ নালা ওভারহেড ট্যাঙ্কি ও আন্ডারগ্রাউন্ড পানি সাপ্লাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার, ভূপৃষ্ঠ পানি ব্যবহার বাড়াতে হবে।AWD পদ্ধতির ব্যবহার চালু করতে হবে।
ধান সবজি ফলমূল সহ গুরুত্বপূর্ণ ফসলে আইপিএম পদ্ধতি সম্প্রসারণ করতে হবে।
জৈব বালাই নাশক , জৈব সার, অর্গানিক ফার্মিং চালু করতে হবে।
কৃষিতে উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য শ্রমিক খরচ কমাতে হবে এর জন্য কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ দ্রুত দরকার বর্তমানে হারভেস্টিং মেশিন, পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, কম্বাইন হারভেস্টার ,রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, পাওয়ার মেশিন ক্রাসিং মেশিন, উইডার ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে এর ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে।
৫. ফসলের নিবিড়তা বাড়ানো
বাংলাদেশে অনেক জমি এখনো অনাবাদি রয়েছে। এইসব জমিতে ফসল আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে ।যেখানে এক ফসল হয় সেখানে দুই বা ততোধিক ,যেখানে দুই ফসল আবাদ হয় সেখানে তিন বা চার ফসল এবং তিন ফসলি জমিতে চার ফসল বা পাঁচ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণ করা। এ ধরনের কয়েকটি প্রযুক্তি আলোচনা করা হলো
১. রোপা আমন - সরিষা মুগ ডাল- রোপা আউস শসা বিন্যাস
এখানে আমন ধানের জাত হিসেবে বিনা ধান সরিষ বারি সরিষা ১৫ মুগডল৬/৮
২. রোপা আমন -সরিষা -বোরো- লোপা আউস
এখানে বারিসরিষার ১৪, বিনা ধান ৭ ব্যবহার করতে হবে
৩. আমন ধান- আলু -বোরো ধান- আউস ধান
৪. রোপা আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে গম চাষ এবং এরপর রাজশাহী অঞ্চলে রাজশাহী অঞ্চলে
খড়ের মালচ ব্যবহার করে বিনা চাষে রসুন পাবনা অঞ্চলের জন্য উপযোগী।
রাজশাহী অঞ্চলে আলু- ভুট্টা-রোপা আমন ধান ফসল বিন্যাসে সুষম সার ব্যবহার।
বরেন্দ্র অঞ্চলে রোপা আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে খেসারি চাষ ।
বরেন্দ্র অঞ্চলে গম- মুগ ডাল -রোপা আমন ফসল বিন্যাসে উন্নত সার সুপারিশ ব্যবহার করা।
রোপা আমন -পতিত- মুগ ডাল খুলনা অঞ্চলের জন্য একটা উন্নত ফসল বিন্যাস। খুলনা অঞ্চলে ভূট্টার সাথে লালশাক ও পালং ফসল চাষ।
সরিষা- রোপাআউশ -রোপা আমন একটা উন্নত ফসল বিন্যাস।
সরিষা - পাট রোপা আমন মন একটা উন্নত ফসল বিন্যাস ।
পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় তরমুজ উৎপাদন সার সুপারিশ সুষম করে।
রোপা আমন ধানের পর শীতকালীন মিষ্টি কুমড়া চাষ দক্ষিণ অঞ্চলের একটা উপযুক্ত প্রযুক্তি।
বরেন্দ্র অঞ্চলে স্বল্প চাষ ও মালচ ব্যবহার করে মাটির আদ্রতা সংরক্ষণের মাধ্যমে টমেটো, কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে মরিচের সাথে রসুনের আন্তঃ ফসল চাষ।
পাবনার চরানচলে মসুর সরিষা বোনাউস ধান মাসকালাই ফসল বিন্যাস ।
বাঁধাকপির সাথে ধনিয়ার আন্ত চাষ ভোলার উপকূলীয় অঞ্চলে উপযোগী।
আলু- চিনা বাদাম -রোপা আমণ একটা উন্নত ফসল বিন্যাস ।
মালচ ব্যবহার করে আলু ও টমেটো উৎপাদন। মরিচের সাথে রসুনের আন্তঃ ফসল চাষ।
আমন ধানের পর বেড পদ্ধতিতে কুমড়া জাতীয় সবজি চাষ।
উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে তরমুজের সাথে রসুনের আন্তঃ ফসল।
সরিষা ও বোরো ধানের মিশ্র চাষ
রোপা আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে মটর শুটির চাষ ।
রপা আমন ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে মসুর ও সরিষার মিশ্র চাষ। গম-পতিত- রোপা আমন একটা ফসল বিন্যাস ।
টিসি -রোপা আউষ ও রোপা আমন একটি ফসল বিন্যাস ।
আলু ভুট্টা পাট রোপামন
আলু করলা পটল পেঁয়াজ
রোপা আমন আলু বোরো ধান শস্য বিন্যাস।
৬. বসত পিটায় অনাবাদি জমির ব্যবহার:
বাড়ির আঙ্গিনায় আলো বাতাস পড়ে এমন দেখা ছায়াযুক্ত জায়গা সাথে জায়গা পুকুরের পাড় অকলা কাঠের গাছ বাড়ির ছাদ বাড়ির দেওয়াল এবং বাউন্ডারি প্রাচীর এইসব জায়গা ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসল শাকসবজি উৎপাদন করা যায়।
৭.ভাসমান কৃষি ও ঝুলন্ত কৃষি:
বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল হাওর অঞ্চল সহ যেসব এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধ অবস্থা থাকে সেখানে ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসলাদি উৎপাদন করা যায় । বর্তমানে বরিশাল অঞ্চলের বেশ কয়টি উপজেলায় বিশেষ করে নাজিরপুর ঝালকাঠি বরিশাল জেলার উজিরপুর ফরিদপুর অঞ্চলের ফরিদপুর অঞ্চলের গোপালগঞ্জ জেলায় গোপালগঞ্জ জেলায় জেলাসহ বেশ কয়টা স্থানে ভাসমান পদ্ধতিতে হাওয়ার এলাকার বেশ কয়েকটা উপজেলায় বা সমান পদ্ধতি চাষাবাদ হচ্ছে। গোপালগঞ্জ ও খুলনা জেলা ঝুলন্ত কৃষি পদ্ধতি চালু রয়েছে।
৮। সরজান পদ্ধতি:
বাংলাদেশের উপকূলীয় কয়েকটি জেলায় ঝালকাঠি পিরোজপুর বরগুনা পটুয়াখালী ও ভোলা সহ বেশ কয়েকটি জেলা জোয়ার ভাটার কারণে সরজান পদ্ধতিতে ফসল আবাদ করছে
৯. মাটির স্বাস্থ্য কার্ড প্রণয়ন:
কৃষকভিত্তিক জমির স্বাস্থ্য কার্ড চালু করা যাতে মাটির অবস্থা সহ ফসল ভিত্তিক সারের সুপারিশ উল্লেখ থাকবে।
১০. একই জমিতে বারবার একই ফসল না করে শস্য পর্যায়ক্রম অনুসরণ করা ফসল বিন্যাসে বিভিন্ন ফসল অন্তর্ভুক্তি করা।
১১. আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও জলবায়ু উপযোগী কৃষি প্রযুক্তি কৃষকদের মাঝে দ্রুত বিস্তারের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রদর্শনী স্থাপন পরিদর্শন গ্রুপ আলোচনা মার দিবস চাষী রেলি উদ্বুদ্ধকরণ ভমন ইত্যাদি চালু করা।
*১২. ডিজিটাল কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য তথ্য ও সরবরাহ উন্নত করুন মোবাইল অ্যাপস টেলিভিশন রেডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আবহার পূর্বাভাস কৃষকদের মাঝে অবহিতকরণ বাজার ব্যবস্থার উন্নতকরণ ব্যবস্থা জোরদার করুন ইত্যাদি দরকার।
১৩. অনাবাদি জমি ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য বিশেষ ধরনের প্রকল্প চালু করা।
১৪. বাংলাদেশে যে কয়টি হটস্পট রয়েছে বিশেষ করে হাওড় অঞ্চল বরেন্দ্র অঞ্চল অঞ্চল উপকূলীয় অঞ্চল নদীর মোহনা পাহাড়ি এলাকা ও সমতল এলাকার উপযোগী কৃষি প্রযুক্তি চালু করুন।
১৫. কৃষি সম্প্রসারণ সেবা উন্নত করন ,কৃষি গবেষণা সম্প্রসারণ জোরদার করুন কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম বৃদ্ধি করন, কৃষিভিত্তিক প্রকল্প সহায়তা বৃদ্ধি করুন ,কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, কৃষি বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন করুন,ভর্তুকি বৃদ্ধি করন, কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে কৃষিকে ঢেলে সাজাতে হবে।
0 Comments