উন্নত ও খাটো (ওপি) জাতের নারিকেল চাষ পদ্ধতি:
নারিকেল গাছের গুরুত্ব:
নারিকেল জনা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৃক্ষ এই গাছের সবকিছুই মানুষের কাজে লাগে গাছের পাতা থেকে শিকড় পর্যন্ত সবকিছুই কোন না কোন কাজে ব্যবহার করা হয় শিল্পের কাঁচামাল খাবার তৈরির উপকরণ পানিও তৈরি রোগের তথ্য হিসাবে পৃথিবীতে এটি একটি সুপরিচিত বৃক্ষ যাহা স্বর্গীয় গাছ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।
লম্বা জাত বনাম খাট জাত:
![]() |
লম্বা জাত |
আমাদের দেশে নারিকেলের যেসব জাতের প্রচলন আছে সেগুলো মূলত লম্বা জাতের, ফলন তুলনামূলকভাবে কম, ফল প্রাপ্তির সংখ্যা গড়ে বছরে সর্বোচ্চ ৫০-৬০টা । দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে আগে থেকেই লম্বা জাতের নারিকেল চাষের প্রচলন আছে । বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এগুলোর ঝড়ো হাওয়া,সহনশীলতা কম।
পক্ষান্তরে খাটো আধুনিক জাতগুলো অল্প সময়ে ফল দেয়া আরম্ভ করে, ফলদান ক্ষমতা অনেক বেশি এবং ঝড়ে ভেঙে পড়ে না।
বাংলাদেশের কোন এলাকায় নারিকেল ভাল হয়?
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলিতে এলাকায় নারিকেল গাছ ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়ে আসছে। নারিকেল গাছ লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে ।সমুদ্রের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মাঝেমধ্যে নারিকেল গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং গাছ লম্বা হওয়ায় ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে যায় ।ফলে নারিকেল চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।এই এলাকায় চাষাবাদ এর জন্য অপেক্ষাকৃত খাট জাতের নারিকেল দরকার ।
উপকূলীয় জড়ো হওয়া প্রতিরোধ করে বেঁচে থাকতে পারবে।
খাট জাতের নারিকেলের জাত কি কি?
বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য কয়েক বছর আগেই খাটো জাতের নারিকেল গাছ আনয়ন করা হয় এর মধ্যে দুটি জাত কৃষক লেভেলে জনপ্রিয়তা পায় রাত ২টির বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেওয়া হলো :
১। সিয়াম গ্রীন কোকোনাট :মূলত ডাব হিসেব বেশি ব্যবহার হয় ।ফলের রং সবুজ ,আকার ছোট , দেড় কেজি পর্যন্ত ,ডাবের পানি পরিমান প্রায় ৩০০ মিলি ।বছরে দেড়শ টির মত ফল পাওয়া যায়।
২। সিয়াম ব্লু কোকোনাট: একটি জনপ্রিয় জাত, কৃষকরা পছন্দ করে, রোপনের তিন বছরের মাথায় ফল ধরে, ফলের ওজন দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। যাবে পানির পরিমাণ৩০০মিলি। সংরক্ষণ গুণ বেশি, রপ্তানি যোগ্য গাছ প্রতি প্রায় দেড়শ টি ডাব ধরে।
নারিকেল চাষে কি ধরনের মাটি লাগে?
সব ধরনের মাটিতে নারিকেল চাষ হয় তবে শক্ত কাকড়, শিলাযুক্ত মাটিতে নারিকেল ভালো হয় না।
গর্ত করার নিয়ম:
দোআঁশ মাটিতে:
১মিটার চওড়া ও ১মিটার গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হবে।
এঁটেল মাটিতে:
১.২মিটার চওড়া ও ১.২মিটার গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হবে।
শক্ত মাটিতে :
১.৫মিটার চওড়া ও ১.৫মিটার গভীর করে গর্ত তৈরি করতে হবে।
রোপণ সময় :
জুন-জুলাই মাসে নারিকেল গাছ লাগালে ভালো হয় ।মাটিতে রস থাকে, বৃষ্টিপাত হয় ,গাছ সহজেই মাটিতে লেগে যায় ।তবে নারিকেল গাছ সারা বছরে রোপন করা যায়।
রোপণ দূরত্ব :
বসতভিটায় কম সংখ্যক গাছ লাগানো হলে ৫ মিটার দূরে দূরে রাখতে হবে। বাগান করা হলে আকারে ৬ মিটার দূরে দূরে রোপণ করা যাবে। গর্ত তৈরি করে ৫-৭ দিন রোদে শুকাতে হবে।তারপর গোবর ও রাসায়নিক সার উপরের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্তে দিয়ে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে। ১৪-২০দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
গর্তে সার প্রয়োগ :
১। জৈব সার -১০-১৫কেজি,
২। ভার্মি সার - ২ কেজি,
৩।খৈল ৪০০ গ্রাম,
৪।টিএসপি ৪০০ গ্রাম,
৫।এমওপি ৪০০ গ্রাম,
৬।জিঙ্ক সালফেট ৫০ গ্রাম,
বোরন ৫০ গ্রাম,
চারা রোপণ :
চারা লাগানোর জন্য ৩০সেন্টিমিটার চওড়া ও ৪৫ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে নিয়ে তাতে চারা রোপণ করতে হবে। চারা এমন ভাবে রাখতে হবে যেন নারিকেলের অংশ কিছুটা দেখা যায়। চারা লাগানোর পরে স্যারের দিকে ঘেরার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গরু ছাগল গবাদি পশুর হাত থেকে চারাটি রক্ষা পায়।
সার প্রয়োগ ও সেচ প্রদান :
চারা লাগানোর পর হতে ৩ মাস অন্তর অন্তর নিম্নছকে উল্লেখিত হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।
গাছের গোড়া হতে ২ফুট দূরে ২ফুট প্রশস্ত ও ১ফুট গভীর নালা করতে হবে। নালায় সারগুলো প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সার আরও দূরে প্রয়োগ করতে হবে। সার ব্যবহারের পর পানি দিয়ে গাছের গোড়া ভেজাতে
হবে।
বি. দ্র. ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ও বোরন সার ৬ মাসের ব্যবধানে বছরে
দুইবার প্রয়োগযোগ্য
পরিচর্যা :
নারিকেল বাগান আগাছা মুক্ত রাখতে হবে গাছের গোড়া থেকে কিছু অংশ বাদ দিয়ে চারিদিকে কয়েক সেন্টিমিটার পুরু করে কচুরিপানা দিয়ে মালচিং দিতে হবে পরবর্তীতে মালচিং পচে গেলে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
রোগ ও পোকামাকড়ের পরিচর্যা :
১। কুড়ি পচা রোগ দমন:
ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয় এই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৪ থেকে ৫ গ্রাম সিকিউর কুরির গোড়ায় মিশিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায় ।
২।ফল পঁচা রোগ দমন:
কচি ফল পচে যায় এর প্রতিকার হিসেবে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ইন্ডোফিল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ।
৩।পাতার দাগ পড়া রোগ দমন:
পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে আস্তে আস্তে গাছ নষ্ট হয়ে যায় । সুষম সার প্রয়োগ করলে রোগ বালাই কম হয় । বেবিস্টিন ১৫ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে ।
৪।স্টেম ব্লিডিং :এই রোগের আক্রমণে গাছ থেকে রস নির্গত হয় এবং ভিতরে গর্তের সৃষ্টি হয়। চাকু দিয়ে ছাল ফেলে দিয়ে বোদোমিক্সার পেস্ট এর মত লাগায় দিতে হবে।
৫।গন্ডার পোকা :এই পোকা গাছের ভিতরে ঢুকে যায় শাঁস খেয়ে ফেলে ।আস্তে আস্তে গাছকে নষ্ট করে । গাছ মারা যায়।
লোহার শিক ঢুকিয়ে পোকা বের করে মারা।
সিরিঞ্জ দিয়ে কীটনাশক গাছের ছিদ্র প্রবেশ করাইয়ে মারা যাবে ।
মাকড় দমন:
৩ ধাপে দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে ।
প্রথম গাছের দুই থেকে ছয় মাস বয়সের কচি ডাবগুলো পেরে আগুনে জ্বলছে ফেলতে হবে ।
দ্বিতীয় ধাপে গাছে যেসব ডাব থাকবে সেগুলোতে ওমাইট৫৭ ১.৫ লিটার পানি
মিশিয়ে কচি পাতায় স্প্রে করতে হবে।
তৃতীয় ধাপে :
প্রথম থেকে ডাবের বয়স দুই মাস হলে আগের মত মাকড় নাশক স্প্রে করতে হবে।
সাত পাকে রাখল মনে এই রোগ হয়
নারিকেল কুরি অবস্থায় ঝরে যায় কেন ?
সাধারণত ছত্রাক জাতীয় রোগের আক্রমণের কারণে নারিকেল ফল কচি অবস্থায় ঝরে যায় এছাড়া রাসায়নিক সার সুষম মাত্রায় না দেওয়া থাকলে অনেক সময় ফল ধরে যায় ।
ছত্রাক জাতীয় রোগ দমনের জন্য secure অথবা indofil জাতীয় ছত্রাক নাশক ভালোভাবে গাছের পাতার দিকে মাথার দিকে করতে হবে ।
নারিকেল চিটা হয় কেন ?
অনেক সময় দেখা যায় নারিকেলে পানি হয় না আবার পানি হলে শ্বাস হয় না আবার অনেক সময় পানিও শ্বাস কোনটাই হয় না এই ধরনের নারিকেল কে চিটা বলা হয় । এদের সাধারণত বোরন সারের ঘাটতি হলে নারিকেলের এই সমস্যা হয় । তাই গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম বোরণ সার বা বরিক পাউডার অন্যান্য স্যারের সাথে প্রতিবছর দিতে হবে।
ফল সংগ্রহ :
খাটো জাতের নারিকেল গাছে সাধারণত তিন বছরের মধ্যেই ফল দেওয়া শুরু হয় ।ফুল আসার পর থেকে পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডাব হয় ,এরপরে ১১ থেকে ১২ মাসের মধ্যে নারিকেল হয় । তবে এই গাছে সময়মতো সার ও সেচ না দিলে ফল আসতে অনেক সময় বিলম্ব হতে পারে ।
প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর প্রয়োজনীয় সার অবশ্যই দিতে হবে তা না হলে খাটো জাতের নারিকেল গাছে ফল আসতে সময় বেশি লাগতে পারে।
নারিকেল ভিত্তিক শিল্প:
১। নারিকেল তেল
২।ঢিরা
৩।শোভাসেট
৪। হস্ত শিল্প -দড়ি, রান্না ঘরের সামগ্রী , ঝাড়ু,brush,papoose,bed jajim
5.seat of rickshaw.auto whilet
Car seat,
6.oil
8.baby food,dairy feed, poultry feed
9.cake
10.ice cream
11.biskuit
12.sweat
0 Comments