কিভাবে রজনীগন্ধা ফুল চাষ করে লাভবান হবেন।
বর্তমানে ফুল চাষ বাংলাদেশ একটা লাভজনক কৃষি প্রযুক্তি। দেশের বিভিন্ন জেলায় ফুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভাবেও । অনেক জেলায় ফুলের চাষ বেড়েই চলেছে । বর্তমানে রজনীগন্ধা ফুলের চাহিদা ব্যাপক থাকায় এই ফুলটি চাষ করলে লাভজনক হবে ।
রজনীগন্ধা ফুলের চাষ পদ্ধতি :
কি ধরণের আবহাওয়া দরকার?
আর্দ্র ও উষ্ণ জল বায়ুতে রজনীগন্ধা ফুল চাষ ভালো হয়। গড় তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রড এ ভালো হয়।
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে ও বর্ষাকালে এই ধরনের আবহাওয়া বিদ্যমান থাকে ।তাই এই সময়ে বাংলাদেশে রজনীগন্ধা ফুল চাষ যুক্তিসঙ্গত হবে। শীতকালে ফুলের উৎপাদন কম হয়। তবে পলিনেট হাউজে নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়ায় সারা বছরই রজনীগন্ধা ফুল চাষ করা যেতে পারে।
কি ধরনের মাটিতে রজনীগন্ধা ভালো হয় ?
মাটি সুনিষ্কাশিত দোআঁশ প্রকৃতির এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হতে হবে। তাহলে রজনীগন্ধা ভালো জন্মাবে। বন্যা মুক্ত এলাকায় উঁচু জমি ও মাঝারী উঁচু জমি ফুল চাষের জন্য উপযুক্ত। মাটির অম্লীয়মান সারে ছয় থেকে সাড়ে সাত ভালো ফলন হয় ।
বাংলাদেশে কয় ধরনের রজনীগন্ধা চাষ হয় এর কোন জাত আছে কি?
ফুলের আকার ও পাঁপড়ির ধরণ অনুযায়ী তিন শ্রেণীর রজনীগন্ধার ফুল পাওয়া যায়
১।সিঙ্গেল
২।ডাবল ও
৩।সেমি ডাবল
তবে বর্তমানে সিঙ্গেল ও ডাবল এই ২ টি জাত বেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবিত রজনীগন্ধার একটি জাত রয়েছে যাহা বারি রজনীগন্ধা ১ নামে পরিচিত।
রজনীগন্ধা ফুলের বংশ বিস্তার :
রজনীগন্ধা ফুলের বংশবিস্তার সাধারণত কন্দের মাধ্যমে হয়ে থাকে ।গাছের গোড়ায় পেঁয়াজের মত কন্দ হয়।এই সকল কন্দ পুরাতন গাছ থেকে সংগ্রহ করে মাঝারি এবং বড় সাইজের কন্দ বংশবিস্তারের জন্য ব্যবহার করা হয় । বড় আকারের কন্দ থেকে ফুল তাড়াতাড়ি আসে, ভালো ফুল পাওয়া যায়। ছোট আকারের অন্ধ থেকে ফুল দেরিতে আসে এবং ছোট ফুল পাওয়া যায়।
রজনীগন্ধা ফুল চাষের জন্য কন্দ কোথায় পাওয়া যাবে ?
১।বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
২।হটিকালচার সেন্টার, ডিএই
৩। বিভিন্ন প্রাইভেট নার্সারি ও
৪। অনেক উদ্যোক্তা কৃষকের বাগানে রজনীগন্ধার বীজ বা কন্দ পাওয়া যাবে।
রজনীগন্ধা চাষের জমি কিভাবে তৈরি করা হয় এবং সার কিভাবে দিতে হবে?
চার পাঁচটি চাষ দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে । মাটি ঝুরঝুরে হতে হবে। মই দিয়ে মাটি সমান করতে হবে।
চাষের সময় বেশ কিছু সার দিতে হবে।
প্রতি হেক্টরে স্যারের মাত্রা:
১। গোবর -১০টন
২। টিএসপি-১৫০কেজি
৩। এমপি -১০০কেজি
শেষ চাষের সময় দিতে হবে। সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
উপরি প্রয়োগ:
রোপন শুরু হইলে গাছের পাতা ছাড়লে রোপনের তিন সপ্তাহ পর গাছের বৃদ্ধি শুরু হয় । এই সময়ে হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে এবং ১০০কেজি ফুল বের হওয়ার সময় দ্বিতীয়বার করতে হবে । সার প্রয়োগের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পাতা ভিজা না থাকে। সার দেওয়ার পর জমিতে পানি সেচ দিতে হবে।
কন্দ রোপন:
শীত মৌসুমে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে কন্দ করতে হবে।
রোপণ সময় কন্দ এর পুরানো শিকড় কেটে দিতে হবে।
কন্দ দুই পদ্ধতিতে রোপণ করা যাবে । ভেলী ও বেড পদ্ধতি। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনের জন্য বেড পদ্ধতি ভালো ।উপকূলীয় এলাকায় সরজান পদ্ধতিতে করতে হবে। ভাসমান বেডেও রজনীগন্ধা করা যাবে । বেডে রোপন করলে দুই বা তিন-সারিতে রোপন করতে হবে। সরজানের বেডে একাধিক সারি করতে হবে। ভাসমান বেডেও একাধিক সারি করতে হবে।
লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং প্রতি লাইনে কন্দের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হবে। কন্দ ৪ ইঞ্চি গভীরে রোপন করতে হবে।
কন্দ রোপনের পর পানি সেচ দিয়ে জমি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
আন্ত পরিচর্যা:
আগাছা দমন
রজনীগন্ধার ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে ।এই জন্য নিড়ানি দিয়ে মাঝে মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে ।
পানি সেচ ও নিষ্কাশন:
শীত মৌসুমে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে
সাধারণত ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর সেচ প্রয়োজন হয় এবং বর্ষাকালে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে ।
গাছ পরিস্কার করা:
গাছের গোড়ায় শুকনা বা মরা পাতা থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে ।শীতকালে গাছের উপরের অংশ কেটে দিতে হবে । কন্দ তৈরির জন্য সাধারণত এই কর্তন করতে হয়।
রজনীগন্ধা ফুলের রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
১।কান্ড পঁচা রোগ ছত্রাক জনিত রোগ , মূলে আক্রমণ হয় এবং গোড়ায় ক্ষতি করে ,গাছ হলুদ হয়ে যায় এবং পরে শুকিয়ে মারা যায় ।এর প্রতিকার হিসেবে বেভিসটিন ১০ দিন পর পর তিনবার স্প্রে করতে হবে ।
২।জাব পোকার আক্রমণ হলে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় ।গাছ খাটো হয় ।
বন্ধু প্রকার সংখ্যা বাড়াইতে হবে ।তাই এই পোকা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে ।
জাব পোকা দমনের জন্য সাবান পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
হলুদ ফাঁদ একটি উত্তম পদ্ধতি।
জাব পোকার আক্রমণ বেশি হলে ফাইফানন জাতীয় কীটনাশক ১০-১২ দিন বা ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে ।
৩। আর একটা পোকার আক্রমণ দেখা যায় তা হল ছাতরা পোকা ।এই পোকার আক্রমন হইলে সাধারণত টুথ ব্রাশ দিয়ে পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে ।বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ।
আক্রমণ বেশি হলে নিমতেল এবং ট্রিকস। প্রতিটা ওষুধ 5ml করে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয় স্প্রে করতে হবে।
৪।থ্রিপস পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে দুই মিলি ম্যালা থিয়ন মিশিয়ে সাত দশ দিন অন্তর স্প্রে করা ভালো।
৫। পাতার দাগ ও লাইট রোগ দমনের জন্য ম্যানকোজেব ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
৬।ধ্বসা রোগ হলে গাছের শিকড় পচে যায় পরে গাছ শুকিয়ে মারা যায় এই রোগ দমনের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
রজনীগন্ধা ফুল সংগ্রহ:
রজনীগন্ধা একই ক্ষেতে পর পর ৩বছর উৎপাদন করা যায় কন্দ রোপনের ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে গাছে স্টিক আসা শুরু হয় ।
নিচের দুটি পাপড়ি যখন দুধের মত সাদা রং ধারণ করে তখন কাটতে হবে। স্টিক কাটার সময় দাঁড়ালো চাকু ব্যবহার করতে হবে। মাটি থেকে প্রায় দুই ইঞ্চি উপরে স্টিক কাটতে হবে।
কাটা স্টিকের গোড়াগুলো বালতির পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে তাহলে ফুল তাজা থাকবে।
কিভাবে টবে রজনীগন্ধা চাষ করবেন?
কিভাবে রজনীগন্ধা ফুল বাজারজাত করবেন?
ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে ফুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং পণ্য বেচাকেনা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শীতকালে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে।তাই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ফুল বাজারজাত করা হলে লাভবান হতে পারেন।
ফলন:
হেক্টর প্রতি ৪ লাখ ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ তিন ফুলের স্টিক পাওয়া যায়।
0 Comments