কিভাবে ফুল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়?


কিভাবে ফুল চাষ করে লাভবান হওয়া যায়?


একসময় ফুল শুধু বসতবাড়ির আশেপাশে চাষ হতো ।বর্তমানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফুলের চাষ কৃষি জমিতে চলে এসেছে ।বাংলাদেশে অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে সেগুলোতে ভালো ফসল ফলানো সম্ভব না হলে ফুল চাষ করা যেতে পারে। কারণ ফুল চাষে বাজার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং ফুল চাষে তেমন খরচ হয় না তাই অবস্থা বুঝে আমাদেরকে  ফুল চাষ এর দিকে অগ্রসর হইতে হবে।

ফুলের বহুবিধ ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ হচ্ছে ।তাই ফুল চাষ করে আপনি সহজেই লাভবান হতে পারেন। 

বাংলাদেশের ফুল চাষের বর্তমান অবস্থা :

বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায় ২৪ টি জেলায় ফুল চাষ হচ্ছে। ফুল চাষের আওতায় জমির পরিমাণ ৩৫০০হেকটর। এর সাথে কৃষক জড়িত ১৫০০০।এছাড়া দেড় লাখ মানুষ সরাসরি ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে ফাঁকা জায়গায় এবং বসত বাড়িতে ছাদ বাগানে অনেকেই ফুল চাষ করছেন ।আনুষ্ঠানিক চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি ফুল বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহার হয়ে আসছে। ফুলের এই চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কি কি জাতের ফুল চাষ করা যায়? 

বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ হয়ে থাকে এর মধ্যে গোলাপ, গাদা, রজনীগন্ধা, ডালিয়া, জিনিয়া, পপি, রজনীগন্ধা মেরিগোল্ড, রঙ্গন, চন্দ্রমল্লিকা উল্লেখযোগ্য।

বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের জন্য  গ্লাডিওলাস বিবেচনায় রাখা যেতে পারে, এরপরে গোলাপ রজনীগন্ধা,মেরিগোলড ।এছাড়া অন্যান্য ফুল চাহিদা  মোতাবেক চাষ করা যেতে পারে।

বাজার  যাচাই করলে দেখা যায়   গ্লাডিউলাস ফুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ।তাই এই ফুলটি বাণিজ্যিকভাবেই চাষাবাদ করা লাভজনক হবে।





                                          
   কিভাবে গ্ল্যাডিওলাস ফুল                   উৎপাদন করা যায়?

মাটি ও জলবায়ু :
 গ্লাডিউলাস ফুলের চাষাবাদের জন্য উপযোগী জলবায়ু বাংলাদেশে বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক জেলায় বন্যার পানি কেমন প্লাবিত হয় না এইসব এলাকায় gladulas  ফুলের আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে । ফুল চাষের জন্য সূর্যের আলো সময়কাল ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভালো হয় ।আমাদের দেশে এই ধরনের আবহাওয়া শীতের মৌসুমে পাওয়া যায় ।তাই শীতকালে এই ফুলটি চাষাবাদ করলে লাভবান হওয়া যাবে।ঠান্ডা আবহাওয়ায় এই ফুল ভাল হয়


হয় । সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টি: তাপমাত্রায় ফুল উৎপাদনের জন্য উপযোগী ।  দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘন্টা আলো পছন্দ করে। রৌদ্রজ্জ্বল জায়গা ,বাতাস চলাচল করে এমন জায়গা ভাল হয়।

কিভাবে গ্ল্যাডিওলাস  বংশবিস্তার করা যায়:
বীজ,
করম এবং 
করমেল এর মাধ্যমে গ্ল্যাডিওলাস বংশবিস্তার করা যায়।

গ্ল্যাডিওলাস ফুলের বীজ কোথায় পাওয়া যাবে ?
       ১। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট 
       ২। হর্টিকালচার সেন্টার, ডিএই।
        ৩। প্রাইভেট নার্সারিতে।

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ:

সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে জমি তৈরি করতে হবে। শেষ চাষের সময় ১০ হাজার কেজি গোবর ৩৭৫ কেজি টিএসসি ৩০০ কেজি এমপি ১২ কেজি বোরিক এসিড ৮ কেজি জিংক সালফেট ও ৩০ গ্রাম সালফার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।১৫০ কেজি ইউরিয়া রোপণের ২৫ দিন পর এবং ১৫০ কেজি ইউরিয়া ফুল বের হ‌ওয়ার সময় দিতে হবে।
কিভাবে   গ্ল্যাডিওলাস ফুলের বীজ/করম রোপন করবেন :

অক্টোবর নভেম্বর মাসে জমি তৈরি হওয়ার পর ৫থেকে ৫.৫ সেমিঃ মাপের করম ৬ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরে রোপন করতে হবে ।রোপন দূরত্ব -২৫*১৫ সেন্টিমিটার । বেড পদ্ধতিতে রোপন করলে প্রতি বেডে দুই থেকে তিনটি সারি যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে শীতকালে সেচের সুবিধা হবে এবং বর্ষাকালে নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে জোয়ার ভাটার কারণে সাধারণত সরজান পদ্ধতিতে  চাষাবাদ হয়ে থাকে। তাই এই পদ্ধতিতে ফুল চাষ করলে ৩-৪ লাইন করা যেতে পারে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা ;
আগাছা দমন :
গ্লাডিউলাসের ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে ।
 প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে, ইউরিয়া দেওয়ার পর সেচ দিতে হবে। গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে।
রোগ বালাই দমন: 
গ্লাডিউলাস
 ফুলে সাধারণত ফিউজেরিয়াম উইলট ও করম পঁচা রোগ হয়।
ফিউজেরিয়া উইল্ট রোগ দমনের জন্য বেবিসটিন দ্বারা করম শোধন করতে হবে । ইহা ছাড়া ট্রাইকোডার্মা সাসপেনশন ব্যবহার করা যেতে পারে ।
করম পঁচা  রোগ দমনের জন্য হিমাগারে করম রাখতে হইবে । করম তোলার সময় যেন আঘাত প্রাপ্ত না হয় । প্রয়োজনে ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা: 
গ্লাডিউলাসে
 থ্রিপস ও জাব পোকার আক্রমণ দেখা যায় ।
    থ্রিপস পোকা   দমনের জন্য সাধারণ সাদা আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে ।এছাড়া আক্রমণ বেশি হলে ফোকাস  ৫০ এসসি স্প্রে করা যেতে পারে । আক্রান্ত পাতা বা ফুল তুলে পোকা মারা যায়।
জাব পোকা আক্রমণ দমনের জন্য হলুদ রঙের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে ।এছাড়া সাবানের গুড়া প্রতি লিটার পানিতে পাঁচ গ্রাম মিশে ১০ দিন পর পর দুই তিনবার স্প্রে করা যেতে পারে।

ফুল সংগ্রহ: 

স্পাইকের নিচে দুই একটি ফ্লোরেট বের হলেই কাটার উপযুক্ত হয় । ফুল সংগ্রহের পর বালতি ভর্তি পানিতে সোজা করে ডুবিয়ে রাখতে হবে। কাটা সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গোড়ায় চার-পাঁচটা পাতা থাকে। যাহা করম বৃদ্ধির জন্য দরকার।

করম তোলা ও সংরক্ষণ:
 ফুল ফোটা শেষ হয়ে গেলে যখন গাছের পাতা গাছ মারা যায় তখন গাছের গোড়া খুরে করমগুলি সংগ্রহ করা যায় ।করম এমনভাবে সংগ্রহ করতে যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় ।বাছাই করে ভেবেসটিন দ্রবণে শোধন করে ছিদ্র যুক্ত 
পলিব্যাগে ভরে  ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে।

বারি গ্লাডিউলাস১:


একটি লাল রঙের ফুল। পাপড়ি হলুদ ছোপ বিশিষ্ট।  পানিতে এই ফুলের সজীবতা ৮ থেকে ৯ দিন । ফ্লোরেটের সংখ্যা 11 থেকে 12 । 

বারি গ্লাডিউলাস ২



লম্বা মোটা যুক্ত এতে অনেকগুলি ফ্লোরেট থাকে। ফুলের রং মেজেন্ডা রং 
 পানিতে ৯ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত রাখা যায় ।

বারি গ্লাডিউলাস ৩



 ফুলের রং সাদা ।নয় থেকে সাড়ে ৯ সেন্টিমিটার ব্যাস। ফুলের সজীবতা  8 থেকে 9 দিন থাকে ।

বারি গ্লাডিউলাস ৪



 ফুলের রং গোলাপি । প্রায় 9 সেন্টিমিটার ব্যাস হয়ে থাকে। Floret ১২ থেকে ১৩ টি। ফুলের সজীবতা থেকে নয় দিন ।   ফলন ২০০০০০      স্টিক /হেক্টর।

বারি গ্লাডিউলাস ৫



 হলুদ রঙের ফুল । সজীবতা ৬ থেকে ৮দিন। 
ফলন ২ ০০০০০টি/হেক্টর।
বারি গ্লাডিউলাস ৬



ফুলের রং আকর্ষণীয় নীল। ৯  সেন্টিমিটার ব্যাস । Floret ১০ থেকে ১১ ।ফুলের সজীবতা ৮ থেকে ৯ দিন। হেক্টর প্রতিফলন এক লক্ষ আশি হাজার স্টিক ।

কিভাবে  ফুল বাজারজাত করবেন?


ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন শহরে ফুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং পণ্য বেচাকেনা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শীতকালে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে।তাই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ফুল বাজারজাত করা হলে লাভবান হতে পারেন।



বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চল ও দক্ষিণ অঞ্চলে কোন জাতের  চাষ করলে লাভবান হবেন?

বারি গ্লাডিউলাস ৫ তাপ সহনশীল   হওয়ায় এই জাতটি চাষ করা যায়।


   
                         







Post a Comment

0 Comments