কিভাবে ফসলে মালচিং(Mulching) ব্যবহার করা হয়?
মালচিং ফসলের আধুনিক একটা প্রযুক্তি যেখানে উদ্ভিদজাত আবর্জনা ,খড়, পাতা ,ফসলের অবশিষ্টাংশ বা প্লাস্টিক জাতীয় আবরণ দিয়ে মাটি ঢেকে রাখা হয় যাতে করে ফসলের পানির সাশ্রয় হয় এবং আগাছা ও রোগ বালাই দমন হয়
মালচিং(Mulching) কেন ব্যবহার হয়?
মার্সিন মাটিতে দীর্ঘদিন আদ্রতা ধরে রাখে এর ফলে শেষ কম লাগে মালচিং করলে ফসলের আগাছা কম হয় রোগ বালাই কম হয় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মাটির ক্ষয় রোধ করে জৈব পদার্থ বৃদ্ধি করে এবং মাটির গুনাগুন ভালো রাখে।
মালচিং ব্যবহার করা হয় সাধারণত পানির অপচয় রোধ করার জন্য, এছাড়া আগাছা দমন হয় ,রোগ বালাই গমন হয় এবং ফসলের আদ্রতা সংরক্ষিত হয়।
মালচিং(Mulching) পদ্ধতি কয় ধরনের?
ফসলে দুই ধরনের মালচিং ব্যবহার হয় একটি হলো উদ্ভিদজাত পদার্থ দিয়ে, অন্যটি হলো প্লাস্টিক জাতীয় আবরণ দিয়ে।
মালচিং(Mulching) কোন কোন ফসলে ব্যবহার হয়?
মালচিং সাধারণত বিভিন্ন ফসলেই ক এইরা হয় তবে উচ্চমূল্যে সবজি সহ কতিপয় ফল-ফলাদির বাগানে বর্তমানে মালচিং বেশি ব্যবহার হচ্ছে । সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো , ফুলকপি, আলু বাঁধাকপি , ঢেঁড়স ,শসা, ব্রকলি , কুমড়া জাতীয় ফসলের মধ্যে তরমুজ ,শসা, মিষ্টি কুমড়া, করলা, মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পিঁয়াজ, রসুন, আদা ,হলুদ ,মরিচ ,ফল ফলাদির মধ্যে কলা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, আম,তরমুজ মালচিঙ পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছ।
মালচিং(Mulching) উপকরণ কয় ধরনের?
বিভিন্ন ধরণের মালচিং উপকরণ আছে।
যেমন ১।খড় মালচিং-ধান,গম, সবজি চাষে ,
২।ফসলের অবশিষ্টাংশ – ভুট্টা, আখ ও ডাল,
৩।সবুজ সার ফসল – ডাল, সরিষা ইত্যাদি ফসল
৪।জীবন্ত উদ্ভিদ-বাগানে ব্যবহার হয় -লজজাবতি ,এজোলা ধান ফসলে।
৫। কচুরিপানা-আলুতে ব্যবহার হয়।
৬। প্লাস্টিক জাতীয় আবরণ -সবজী, মসলা
মাটিতে বহু সময় থাকে।
৭। মালচিং পেপার:
মালচিং পেপার বা ফিল্ম এটি বায়োডিগ্রেডেবল পদ্ধতি যাহা উচ্চমূল্যে ফসল চাষে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে । আদ্রতা সংরক্ষিত হয় ফসলের সেচ কম লাগে এবং পরিবেশবান্ধব বিশেষ করে ফল চাষে এই ধরনের পলিথিন ব্যাপার বেশি ব্যবহার হচ্ছে ।
মালচিং(Mulching) পেপার কোথায় পাবো?
মালচিং পেপার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ- ইস্পাহানি, এগ্রো ওয়ান, দারাজ ,আইরিশ ও ইন্ডিয়ান।
মালচিং(Mulching ব্যবহারের নিয়ম:
মালচিং ব্যবহার করতে হলে ফসলের ধরন অনুযায়ী বেড তৈরি করতে হবে। কিছু কিছু ফসল আছে এক বেডে এক লাইন চারা রোপণ করা হয়, যেমন -তরমুজ,শশা ।আবার কিছু কিছু ফসল আছে যে ফসলগুলো এক বেডে দুই লাইন করা যাবে , যেমন মরিচ, ফুল কপি। এক লাইন চারা রোপণের জন্য চওড়ার মাপ দেড় ফুট এবং ২ লাইন চারা রোপণের জন্য ২ থেকে ৩ ফিট পর্যন্ত হইতে পারে। বেডের উচ্চতা এক ফিট পর্যন্ত করা যেতে পারে বেড লম্বায় জমির সমান হবে ।বেড হওয়ার পর ফসল ভিত্তিক রাসায়নিক ও জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এরপর পলিথিন পেপার বা মালচিং ফিল্ম দিয়ে বেড ডেকে দেওয়া হয় ।৭ দিন পর পলিথিন ছিদ্র করে এক এক বা দুই সারিতে চারা রোপন করা হয় । পলিথিনের দুই পাশ মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় যাতে বাতাসে উড়ে না যায়। মালচিং পেপারের কালো দিকটা মাটির দিকে দিতে হবে। এবং সিলভার কালার টা উপরের দিকে থাকবে। এতে করে সূর্যের আলো তাপ নিয়ন্ত্রণ করে যা ফসলের জন্য দরকার।
আলু ফসলে কোন ধরনের মালচিং বেশি ব্যবহার হয়?
বাংলাদেশে আলু চাষে সাধারণত কচুরিপানা ও খড় দিয়ে মালচিং ব্যবহার করা হয়।
রসুন ফসলে কোন ধরনের মালচিং ব্যবহার করা হয়?
রসুন ফসলে সাধারণত খড় মালচিং ব্যবহার করা হয়।
মুখী কচু ফসলে কোন ধরনের মালচিং ব্যবহার করা হয়?
মুখী কচু ফসলে সাধারণত খড় মালচিং ব্যবহার করা হয়।
প্লাস্টিক মালচিং ব্যবহার করলে পরিবেশের ক্ষতি হবে কি?
সাধারণ প্লাস্টিক পেপার ব্যবহার হলে মাটির জন্য ক্ষতিকর কিন্তু বায়োভিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহার হলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে না বর্তমানে বায়োডিগ্রেভেবল পলিথিন মালচিং বেশি ব্যবহার করা হয়।
প্লাস্টিক মালচিং কোন কোন ফসলে ব্যবহার হয়?
বর্তমানে প্লাস্টিক মালচিং বেশি ব্যবহার হচ্ছে তরমুজ, বেগুন ,মরিচ ,শসা ,ক্ষিরা ,কিছু কিছু ফুল চাষে, মিষ্টি কুমড়া, পটল, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ,স্কোয়াশ, বাঙ্গি, করলা, বোম্বাই মরিচ, ক্যাপসিকাম, লাউ , স্ট্রবেরি ,কুমড়া জাতীয়
উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে।
বাংলাদেশে ফল বাগান গুলোতে কি ধরনের মালচিং ব্যবহার করা যেতে পারে?
বাংলাদেশে বেশ কিছু ফলের বাগান রয়েছে এই সকল ফল বাগানে জৈব মালচিং করা হলে একদিকে যেমন রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ হবে ,আগাছা নিয়ন্ত্রণ হবে ,জমির আদ্রতা ভালো থাকবে, সেচ খরচ কমবে এবং ফলের উৎপাদন ভালো হবে।
বর্তমানে আম ,পেয়ারা ,কুল ,মালটা, লেবু, পেপে, কমলা, ডালিম ,জাম্বুরা, আনার, খেজুর, নারিকেল, সুপারি, কলা, জামরুল, কাজু বাদাম,
লিচু, চা, কফি, ড্রাগন ,লটকন ইত্যাদি বাগান আকারে চাষ হচ্ছে। এসব ফল বাগানে জৈব মালচিং ব্যবহার করা হলে মাটিতে পুষ্টি যোগ হবে এবং মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, ফল গাছের জন্য ভালো হবে ,পরিবেশ বান্ধব এবং খরচ অনেক কমে যাবে।
0 Comments