গ্রীষ্মকালীন শীম চাষ বাংলাদেশে লাভজনক হতে পারে :
বাংলাদেশের সাধারনত শীতকালেই বেশি শীম
চাষ হয়ে থাকে । এমন কোন বাড়ি নাই যে সিমের আবাদ হয় না কিন্তু গ্রীষ্মকালে খুব কম পরিমাণে সবজি থাকায় বাজারে চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এই সময়ে যদি সিম চাষ করা যায় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাবে । বর্তমানে বেশ কিছু গ্রীষ্মকালীন চাষাবাদ হয়ে আসছে।
গ্রীষ্মকালীন জাত কি কি ?
গ্রীষ্মকালীন সিমের বেশ কিছু জাত রয়েছে
এর মধ্যে ইপসা-১,ইপসা-২,বারি শীম-৩ ,বারি শীম-৭ ,সিকৃবি শীম ১ ও সিকৃবি শীম২ , কেরালা ।এছাড়াও আরো অনেক জাত আছে চাষ করা যায় ।
গ্রীষ্মকালীন সিমের বীজ কোথায় পাওয়া যাবে ?
বিএডিসি বিভিন্ন সবজির বীজ বিক্রি করে থাকে। তাদের ডিলারের কাছে গ্রীষ্মকালীন সিমের বীজ পাওয়া যাবে ।এছাড়া বাংলাদেশে অনেক প্রাইভেট কোম্পানি বিভিন্ন সবজির বীজ বিক্রয় করে থাকে তাদের কাছে এই বীজ পাওয়া যাবে ।
এছাড়া নিকটস্থ কৃষি অফিস অথবা কৃষি গবেষণাগারে অথবা যে কোন প্রদর্শনী কৃষকের কাছে এই সিমের বীজ পাওয়া যাবে ।
বারি শিম-৩ একটি গ্রীষ্মকালীন জাত ।
জাতটি তাপ
অসংবেদনশীল ও দিবস নিরপেক্ষ জাত। বছরের যে কোন সময় চাষ করা যায়। ফুল সাদা রঙের
এবং শিম সবুজ বর্ণের। প্রতিটি শিমের ওজন ৬-৭ গ্রাম। প্রতিটি শিমে ৪-৫টি বীজ হয়।
গাছপ্রতি ৪৫০-৫০০টি শিম ধরে এবং পাকার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত নরম থাকে। খেতে সুস্বাদু।
১২-১৪ বার শিম সংগ্রহ করা যায়। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে এ জাতটি চাষ করা যায়।
গ্রীষ্মকালে চাষ করতে হলে March মাসে বীজ বপন/চারা রোপণ করতে
হয়। জীবনকাল ১৫০-১৮০ দিন। ফলন ৯-১০ টন/হেক্টর ।
![]() |
বারি শীম-৩ |
![]() |
বারি শীম ৭ |
শীমের বীজ বপন/চারা রোপন পদ্বতি:
বপনের সময় দূরত্ব এবং বপন পদ্ধতির উপর বীজের হার নির্ভর করে।
বীজের হার:
প্রতি হেক্টরে ৭.৫ কেজি, একরে ৩.০ কেজি এবং শতকে ৩০ গ্রাম বীজ প্রয়ােজন।
জমি তৈরি:
জমি ৪-৫টি চাষ দিয়ে ঢেলা ভেঙ্গে খুব পরিপাটি করে তৈরি করতে হয়।
সমতল পদ্ধতিতে বীজ বপণ/চারা রোপণ:
এর পর সমতল জমিতে সঠিক দূরত্বে উঁচু মাদা তৈরি করে বীজ বপন বা চারা রােপণ করা যায়।
বেড পদ্ধতিতে বীজ বপন বা চারার রোপন:
তবে সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধা এবং পরবর্তী পরিচর্যার সুবিধার জন্য বেড তৈরি করে বেডে বীজ বপন করা সবচেয়ে ভাল। বেড ১৫ থেকে ২৫ সেমি উঁচু এবং ২.৫ মিটার প্রশস্ত হবে। জমির প্রকৃতি এবং কাজের সুবিধা বিবেচনা করে বেডের দৈর্ঘ্য ঠিক করতে হয়। সেচ ও পানি নিকাশের সুবিধার জন্য পাশাপাশি দুটি বেডের মাঝখানে ৫০ সেমি প্রশস্ত ১৫ থেকে ২৫ সেমি গভীর নালা রাখতে হয়। ২.৫ মিটার প্রশস্ত বেডের উভয় পার্শ্বে ৫০ সেমি করে বাদ দিয়ে ১.৫ মিটার দূরত্বে লম্বালম্বি দু'টি লাইন টেনে নিতে হবে। বেডের ২ লাইন বা সারিতে ১.৫ মিটার দূরে দূরে ৩০x৩০×৩০ সেমি সাইজের মাদাতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়াগ করে তৈরি করে ফেলতে হবে। এতে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১.৫ মিটার এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হল ১.৫ মিটার। তাছাড়া ২টি বেডের মধ্যে ৫০ সেমি প্রশস্ত নালা থাকায় পাশাপাশি দুটি বেডের নিকটতম সারি দুটির দূরত্ব হল ১.৫ মিটার। তবে আজকাল ১ মিটার প্রস্থ বেডে ও একক সারি পদ্ধতিতে ১.০-১.৫ মিটার দূরত্বে বীজ বপন/চারা রোপন করা যায়।
উভয় পদ্ধতিতে একক
আয়তনের জমিতে সমসংখ্যক গাছ সংকুলান
হবে। তবে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে গাছের পরিচর্যা ও ফসল উত্তোলন কার্যক্রম
পরিচালনা সুবিধাজনক।
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
শিম ডাল জাতীয় শস্য। এতে সারের পরিমাণ বিশেষ করে নাইট্রোজেন সারে
পরিমাণ কম লাগে। শিম চাষে হেক্টরপ্রতি সার প্রয়োগের পরিমাণ ও প্রয়োগ
পদ্ধতি।
সারের
নাম |
পরিমান |
শেষ
চাষের সময় |
বপন সময় |
উপরি
প্রয়োগ |
গোবর |
১০টন |
সব |
--- |
-- |
ইউরিয়া |
২৫
কেজি |
-- |
১২.৫ |
১২.৫ |
টিএসপি |
৯০
কেজি |
-- |
সব |
৩০ |
এমওপি |
৬০কেজি |
-- |
৩০ |
- |
জিপসাম |
৫
কেজি |
সব |
- |
- |
বোরন
সার |
৫
কেজি |
সব |
= |
- |
|
|
|
|
|
সুত্র
;কৃষি প্রযুক্তি হাত বই ,BARI,GAZIPUR .
সার প্রয়োগ পদ্ধতি : শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর সার
এবং জিপসাম ও বরিক এসিড সবটুকু ছিটিয়ে, প্রয়োগ করে চাষ
দিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপন বা চারা রোপণের সময় ইউরিয়া ও এমপি (পটাশ) সারের অর্ধেক এবং টিএসপি সারের সবটুকু একত্রে
ছিটিয়ে প্রয়ােগ করে মাদার সাথে (১০ সেমি গভীর পর্যন্ত) কোদালের দ্বারা হালকাভাবে
কুপিয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বপন/রোপণের ৩০
দিন পর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ও এমপি সার মাদায় উপরি প্রয়োগ করতে
হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা:
গাছ পাতলা করন:
বপনকৃত বীজ থেকে চারা বের হওয়ার পর ৮-১০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি মাদায় একটি সুস্থ সবল চারা রেখে
বাকিগুলি উঠিয়ে ফেলতে হবে। * দেশি শিমের ক্ষেত সর্বদা আগাছামুক্ত
রাখতে হবে।
শীমের মাচা কিভাবে তৈরি করবেন?
গাছ ২৫-৩০ সেমি উঁচু হলেই বাউনী দিতে হবে এবং মাচা তৈরি করে শিম
গাছকে তুলে দিতে হবে।
গাছ মাচায় উঠা পর্যন্ত গোড়ার দিকে যেন না পেচাতে পারে সেদিকে
লক্ষ্য রাখতে হবে।
V-আকারের মাচা সূবিধাজনক ।
Decoiling কিভাবে করবেন?
শীম গাছের ডগা পেঁচিয়ে গেলে তা ছাড়িয়ে দেওয়া কে Decoiling বলা হয় ।ফলে
গাছের বৃদ্ধি ও ফলন প্রায় ১০-১৫% বেশি হয়।
সেচ ও নিষ্কাশন:
* মাটির রস যাচাই করে ১০-১৫ দিন পর সেচ দিতে হবে ।
পাতা কর্তন ও শাখা কর্তন:
* পুরাতন পাতা ও ফুল বিহীন ডগা/শাখা কেটে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত পাতা থাকলে ২৫ থেকে ৪০% পাতা কর্তন করা যেতে পারে এছাড়া ১০ থেকে ১৫% শাখা কর্তন করা যেতে পারে । এতে গাছে ফুল ফল বেশি পাওয়া যাবে।
ফসল সঙগ্রহ ও ফলন:
জাতভেদে বীজ বপনের ৪৫-৫৫ দিন পর শিমের গুটি (পড) গাছ থেকে তুলা যেতে
পারে। ফুল ফোটার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে শিম তোলার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ।
হেক্টর
প্রতি ফলন-১৫-২০টন ।
শীমের বীজ কিভাবে রাখা হয়?
শীমের বীজ রাখার জন্য সুস্থ,সবল, রোগমুক্ত গাছ নির্বাচন করতে হবে। পরিপক্ক ফল সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হবে। ফলের খোসা ছাড়িয়ে বীজ বের করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে যাতে আর্দ্রতা ৬-৮ পার্সেন্ট এ চলে আসে। প্লাস্টিক বোতলে বা পলিথিন ব্যাগ এ রাখতে হবে।
0 Comments