বাংলাদেশে আম চাষীগণ আম উৎপাদনের সময়ে ১৫-৬০ বার বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকেন। এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ হয় ,জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়, এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় ।এই অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা আমের ব্যাগিং পদ্ধতি সুপারিশ করেছে ।এতে করে অল্প খরচে আম পোকামাকড়ের হাতে রক্ষা পায়, রোগ বালাই থেকে রক্ষা পায়, সূর্যের আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পায় ।
আমের গুণগত মান ভালো হয়। ব্যাগিং প্রযুক্তি বর্তমানে কৃষক লেবেলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।
আমের ব্যাগিং হলে কীটনাশকের ব্যবহার কমবে ফলের গুণগত মান ভালো হবে, উৎপাদন খরচ কমবে এবং আমের সংরক্ষণ গুণ বাড়বে এবং রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন সম্ভব হবে ।
ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাত্র ৩-৪ টি স্প্রের মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন সম্ভব
বাংলাদেশে ব্যাগিং প্রযুক্তির ভূমিকা কি?
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফল উৎপাদন এর মধ্যে আম কলা লিচু পেয়ারা ডালিম এবং আরো কিছু ফল বিশেষ করে কাঁঠাল ব্যাগিং প্রযুক্তির মাধ্যমে রক্ষা করা যায়, বাহিরের পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করা যায়, পাখির আক্রমন থেকে রক্ষা করা যায়, এবং ফলের রঙের আকর্ষণীয় রূপ দেওয়া যায়। ফলে ফলটি ভোক্তার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বেশি পায়। নিরাপদ ফল হয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি থাকে না এবং খরচ কমে যায়। এজন্য বাংলাদেশে ব্যাগিং প্রযুক্তি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
বাংলাদেশে ফলের ব্যাগিং প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশে ফল উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
সারা বছর ফল পাওয়া যাবে ,দেশে ফলের ঘাটতি সহজে মোকাবেলা করতে পারবে এবং পরিবেশবান্ধব ফলের বাজার তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে প্রযুক্তিটি
এদেশে ফল উৎপাদনে একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হিসেবে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক
পরিচিতি লাভ করেছে।
ব্যাগিং প্রযুক্তি কি? What is fruit bagging?
fruit bagging হলো গাছে ফল থাকা অবস্থায় ফল ঢেকে দেওয়া হয় যাতে করে রোগ বালাই পোকামাকড়ের আক্রমন কম হয়।
আম ফল গাছে থাকা অবস্থায়ই একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা বয়সে বিশেষ ধরনের ব্যাগ দিয়ে ফলকে ঢেকে দেওয়া হয় ।এতে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত ব্যাগটি গাছেই লাগানো থাকে। এই পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব ,বিষমুক্ত, নিরাপদ । রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের জন্য খুবই কার্যকরী।
আমে ব্যাগিং প্রযুক্তি বলতে আম গাছে থাকা অবস্থায় একটি বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা আমকে আবৃত করাকে বুঝায়।
ব্যাগিং করার পর থেকে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি।
ফ্রুট ব্যাগিং না হইলে কি হবে?
১।ফুড ব্যাগিং না হলে কৃষকরা কীটনাশক বেশি ব্যবহার করবে ,
২।এতে করে খরচ বেশি পড়বে, পরিবেশ নষ্ট হবে ,
৩।জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে ,
৪। পরিবেশের উপর প্রভাব পড়বে মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি ডেকে আনবে,
৫। আমের গুণাগুণ নষ্ট হবে,
৬।বাজারজাতকরণে চাহিদা থাকবে না,
৭। রপ্তানি করা যাবে না ফলে কৃষকদের আয় কমবে ।
ফুট ব্যাগিং কেন প্রয়োজন? উদ্দেশ্য্ কি?
আমের আশানুরুপ ফলন পাবার আশায় বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ফলে বালাইনাশকের ব্যবহার করে থাকে ।
এতে যে সব প্রভাব পড়ে :
১।জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি ফসলের উৎপাদনকে ব্যাহত
করে ।
২। অতিরিক্ত স্প্রে করার ফলে উপকারী পোকার
সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে আমের কাঙ্ক্ষিত পরাগায়ণ বিঘ্নিত হয়।
ফল উৎপাদনে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে
১।বালাইনাশকের ব্যবহার অনেকাংশেই কমানো সম্ভব
হবে।
২। ব্যাগিং
করা আম বেশি দিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়।
৩। আমকে সংরক্ষণ করতে প্রয়োজন
হয় না ফরমালিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের।
৪। আমকে বাইরের বাহিরের প্রতিকুল আবহওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে ,কাক, বাদুরের আগমন থেকে রক্ষা করা যাবে, সূর্যের আলো ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ,পোকামাকড় হতে সহজেই রক্ষা করা সম্ভব।
আমের সবচেয়ে
বেশি ক্ষতি করে থাকে আমের ফলছিদ্রকারী ও মাছি পোকা।
এই পোকা দুইটি আমের বর্ধনশীল পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে
থাকে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা হয় তাহলে কোন স্প্রে ছাড়াই পোকা
দুইটির হাত থেকে আম ফলকে রক্ষা করা সম্ভব।
৫। ব্যাগিং প্রযুক্তিতে
উৎপাদিত হবে বিষমুক্ত আম, কমবে আমের উৎপাদন খরচ, কমবে দূষণের
মাত্রা এবং বাড়বে আমের গুণগত মান।
বিভিন্ন জাতের আমের ব্যাগিং সময় এক নয়। যেমন আগাম জাতের আমে ব্যাগিং করা হয় ৪০-৫৫ দিন বয়সের গুটিতে। খিরসাপাত আমে করা হয়।
আমের নাবী জাতে ব্যাগিং করা হয় গুটির বয়স ৬০-৬৫
দিন হলে।বারি ৪ জাতের করা হয় ।এই সময়ে আম জাতভেদে মার্বেল আকারের বা এর চেয়েও বড় আকারের হয়ে থাকে।
আমের প্রাকৃতিক ঝরা বন্ধ হলে এবং ফল ছিদ্রকারী পোকার
আক্রমণ শুরু হওয়ার পূর্বেই ব্যাগিং করতে হয়। ব্যাগিং করার পূর্বে অবশ্যই কীটনাশক
ও ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফল ভেজা
অবস্থায় ব্যাগিং করা ঠিক নয়। আমের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনটি স্প্রে
দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথমবার আম গাছে মুকুল আসার আনুমানিক ১৫-২০ দিন
পূর্বে,
দ্বিতীয়বার মুকুল আসার পর মুকুল যখন ১০-১৫
সেমি লম্বা হলে ,
এবং ৩য় বার আম যখন মটর দানারমতো
হলে।
এর পরপরই আমে
স্প্রে করে ব্যাগিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আমে ফুট ব্যাগ ব্যবহারের নিয়মকানুন:
১. ফল
পাতলা করণ :
একটি পুষ্পমঞ্জুরীতে অনেকগুলো আম থাকলে প্রথমেই ফল পাতলা করতে হবে। এরপর সবচেয়ে ভালো, দাগমুক্ত একটি অথবা দুটি আমে ব্যাগিং করতে হবে। তবে বড় জাতের আমের ক্ষেত্রে প্রতি পুষ্মমঙুরীতে একটির বেশি ফল রাখা উচিৎ নয়।
২।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
ব্যাগিং করার আগে আমের বোঁটায় মরা বা শুকনা অংশ, উপপত্র, মুকুলের অংশবিশেষ লেগে থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ব্যাগিং করতে অসুবিধার সৃষ্টি করলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
৩। সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যাগ সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজনীয়
শ্রমিকের ব্যবস্থা করা ।
চেয়ার বা টুল বা মই সঙ্গে থাকলে ভাল হয়।
৪।ব্যাগিং করার পূর্বে একটি কীটনাশক ও একটি ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে
ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
৫।এরপর
আমগুলো শুকালে ব্যাগিং করতে হবে।
৬। রৌদ্রোজুল আম ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা উচিৎ নয়।
৭। ব্যাগের উপরের অংশ দুই
পাশ হতে ভাঁজ করতে করতে মাঝ বরাবর আসতে হবে।
৮।এরপর সংযুক্ত তার দ্বারা ভালোভাবে
মুড়িয়ে দিতে হবে। যেন কোন অবস্থাতেই পানি, পিপড়া, মিলিবাগ প্রবেশ করতে
না পারে।
৯।. রঙিন আমের জন্য একস্তর যুক্ত সাদা ব্যাগ এবং
১০। অন্য যে কোন জাতের জন্য বাদামী ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে।
বিশেষভাবে উলেখ্য যে, দুই স্তর যুক্ত বাদামী রঙের ব্যাগ যে কোন আমকে রঙিন করতে পারে অর্থাৎ হলুদ করতে পারে। আর এই রঙ পরিবর্তনে সময় লাগে ৩৫-৪৫ দিন।
ব্যাগিং প্রযুক্তির প্রধান সুবিধা:
১। নিরাপদ, বিষমুক্ত
ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের সহজ উপায়।
২। বালাইনাশকের ব্যবহার কমবে
৩। পোকামাকড়ের আক্রমন কম হবে
৪ ।আমকে রঙিন করা যায়
৫।আমের সংরক্ষণকাল বাড়ানো যায়
৬। রপ্তানির জন্য খুবই গুরুতুপর্ণ
৭। বাজারে আমের চাহিদা বেড়ে যায়।
৮। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করা যায়।
৯।ফল আমদানি কমানো যায়।
বাংলাদেশে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা :
যেহেতু বাংলাদেশে বর্তমানে উন্নত জাতের আম, লিচু ,পেয়ারা ,কলা, কাঁঠাল ব্যাপকভাবে উৎপাদন হচ্ছে ,এমনকি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে ব্যাগিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হলে বাংলাদেশের ফল রপ্তানিতে একটা বিশাল সম্ভাবনা দেখা যাবে । নিরাপদ ফল উৎপাদন বাড়বে ,সাথে সাথে রপ্তানির সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধি পাবে।
0 Comments